এই ব্লগটি সন্ধান করুন

Translate

বিজ্ঞাপনের জন্য জায়গা

বিভিন্ন রকমের বিজ্ঞাপন হতে পারে।

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

রোমান্টিক ট্র্যাজেডি গল্প ( অবুঝ মন )




   
রচনায়ঃ-ivnvb Zvcm

এক-
দেয়াল ঘড়িতে মিস্টি মধুর মিউজিক ভেসে উঠলপ্রতি ঘন্টায়-ঘন্টায় এই মিউজিক বাজেমিউজিক শেষে ঘন্টার ওয়ারনিং বাজেরুবেল ঘুমের ঘোরে সেই ওয়ারনিং শুনতে থাকে আর মনে-মনে গুণতে থাকেপর পর দুটি টং টং শব্দ হলোতার মানে এখন রাত দুটোওপাশে কাত হয়ে শুতে গেলেই আধো ঘুমান্ত চোখের উপর পড়লো আলোর ফলকচোখ খুলতেই হকচকিয়ে গেল
একি দেখছে রুবেল?রুমের জানালাটা খোলাই ছিলআর সেই জানালা দিয়েই এতো আলো আসছে,এই রাত দুপুরেরুবেল বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো
রুবেল থাকে পাঁচ তলার উপরের ছাদের চিলেকোঠায়সুন্দর একটা নিরিবিলি রুমেতার সামনে বিশাল একটা খোলা ছাদএটাই রুবেলের বিশাল রাজ্যনীচে থাকে তার বাবা-মা আর ছোট ভাই-বোন
রুমের দরজা খুলে ছাদে এলোএসেই অবাক!কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলএ দেখি এক মায়াময় নতুন জগৎএটা কি আমাদেরই পৃথিবী? নাকি অন্য কোন গ্রহ!বিশ্বাস হচ্ছে নাআকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে,কি অপূর্ব সোনালী আলো ঝলমল করছেচারিদিকে আলোর বন্যাআকাশ জুড়ে তারাদের মেলামনে হচ্ছে আকাশটা আজ বিয়ের সাজে-সজ্জিততারাগুলো কি সুন্দর মিটিমিটি করছেঠিক যেন বিয়ে বাড়ির আলোক বাতির মতবিয়ের উৎসবেই মেতে উঠেছে সারাটা পৃথিবীমনে হয় ঐ চাঁদটার আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বসেছেভরা যৌবনে আজ চাঁদের ভরা পূর্ণিমাগোটা পৃথিবীময় সোনালী আলোয় উজ্জলচাঁদটাকে দেখতে হীরার থালার মত লাগছেসেই আকাশে ভাসমান থালা থেকেই বেরিয়ে আচ্ছে,এই অপূর্ব সোনালী-রূপালী আলোর ঝলক
দারুণ লাগছে রুবেলেরঅজস্র তারার ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেএমন সময় মনের মধ্যে খুব তীব্র ব্যথা অনুভব করছে রুন্টির জন্যআজ এমন মধুর সময় রুন্টি বাসায়ই নেই
রুন্টি থাকে রুবেলদের পাশের বিল্ডিংয়েএই মুহুর্তে রুন্টিকে এক পলক ও যদি দেখতে পেতো রুবেলের মনটা সুখেভরে উঠতোকিন্তু আজ সকালেই রুন্টি তার মামা-মামীর সাথে বরিশাল গেছেযাওয়ার সময় রুবেলদের বাসায় চাবি রেখে গেছেসুতরাং রুন্টি নিশ্চয়ই বাসায় নেইযদিও ছাদ থেকেই রুন্টির রুম দেখা যায়রুন্টিকে রুবেল এতো ভালোবাসে তা কখনও বলতে পারেনিএমনিতে রুবেলের সাথে রুন্টির অনেক কথা হয়কিন্তু আসল কথাটা কখনও সরাসরি বলা হয়ে উঠেনি
রুন্টি মেয়েটার ¯^fve আবার একটু অন্য রকমসে সবার সাথেই কথা বলেমহল্লার অনেক ছেলেদের সাথে ওর বন্ধুত্ব আছেতবুও রুবেল ভেবেছে,তার ভালোবাসা রুন্টি কখনও প্রত্যাখ্যান করবে নাতাই এতো দিন রুবেল তার ভালোবাসার কথা সরাসরি বলেনিতবে যখনই রুবেল রুন্টিদের বাসায় যেতো তখনই রুন্টি ছুটে আসতো সব কাজ কর্ম ফেলেআবার অনেক সময় পাশাপশি ছাদেও অনেক কথা হতোরুবেলের ইচ্ছে ছিল আজকের মতো এমন একটা মায়াময় রাতে রুন্টিকে ডেকে তার ভালোবাসার কথা বলবেতাই ভেবে মনের অজান্তেই রুন্টির রুমের দিকে তাকালএ কি?রুন্টির রুমের জানালাটা তো খোলাএমনিতেই ওর রুমে কাউকে ঢুকতে দেয় নাও বাসায় না থকলে,সব সময় ওর রুম তালা মেরে রাখেযদি রুন্টি রুমে থাকে তবেই জানালাটা খোলা রাখেকিন্তু আজ তো রুন্টির বাসায় থাকার কথা নাএমন কি ওদের বাসার মামা-মামী,ছোট ভাই-বোন কেউ থাকার কথা নাতা ছাড়া রুবেল নিজেই সন্ধ্যার সময় রুন্টিদের বাসার চাবি দেখেছেআলমারির উপর থেকে রুবেলের মাই চাবিটা তুলে রেখেছেতাহলে কি ডুপ্লিকেট চাবি আছে?
জানালা দিয়ে রুবেল আরও একটু ভিতরের দিকে দৃস্টি দিলরুমের লাইটটা নিভানোতবে চাঁদের আলো জানালা দিয়ে ভিতরে কিছুটা প্রবেশ করেছেনারিকেল গাছের পাতার ছায়াটা রুমের ভিতরে দোল খাচ্ছেরুবেলের দৃস্টিটা আরও একটু ভিতরে নিতেই তার হাত-পা সব ঠান্ডা হবার উপক্রম
এ কি দেখা যাচ্ছে!বিছানায় কে যেন নাড়াচড়া করছেকিছুটা ধুসর সাদা মাটির  রঙের মতসোডিয়াম লাইটে যে রকম লাগেআরও একট ুভালো করে দেখার জন্য রুবেল ছাদের রেলিং-এর ওপর উঠে দাঁড়ালোএখন তো সাদার সাখে কালোর কি যেন বিছানায় নাড়াচরা করছেনারিকেল গাছের পাতার ছায়াতে ঠিক বোঝা যাচ্ছে নাতবে বিছানায় কেউ না কেউ,কিছু না কিছু করছে,্‌এটা নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছেভালো করেই খেয়াল করলো রুবেলনীল চাদরটার উপর দুটি প্রাণীএকজনের গায়ের রং অনেকটা রুন্টির মতোইরুবেল আর ভাবতে পারছে না
রুন্টি যে ঐ প্রকৃতির তা রুবেলের বন্ধু সোহেল একদিন বলেছিল,রুবেল সেই থেকে সোহেলের সাথে তেমন কথা বলে নাসোহেল বলেছিল,“রুন্টি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির আর তুই হলি গিয়ে তার বিপরীততারপর তোর কোন গাল ফ্রেন্ড নেইঅথচ রুন্টির অনেক বয় ফ্রেন্ড
আরও ইত্যাদি,ইত্যাদি অনেক কথা বলেছেসেদিন সোহেলের সাথে খুব রাগ করেছিল রুবেলএখন রুবেল ভাবে,আসলেও সোহেল ভালোর জন্যই কথাগুলো বলেছিলতখন যদি একটু সতর্ক হওয়া যেতো তা হলে আজ আর এমন দূর্দশা হতো নাএই মুহুর্তে এই সব ভেবে রুবেলের খুব কান্না পাচ্ছেকি করবে বা কি করা উচিৎ ঠিক বুঝে উঠতে পারচ্ছে না
রুমে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করলোমনটা খুব অস্থিরজীবনের প্রথম ভালোবাসায় প্রতারিত রুবেলকিছুতেই রুন্টিকে মাফ করবে নাতাকে একটা বড় শিক্ষা দেওয়া দরকারপ্রচন্ড রাগ হলো রুবেলেরটর্চ লাইটটা নিয়ে সরাসরি রুন্টির বিছানায় আলো ধরলোকিন্তু তখন আর কেউ বিছানায় ছিল নাশুধু বিছানার নীল চাদরটা এলোমেলো করে,আউলিয়ে-ঝাউলিয়ে রয়েছেসুতরাং প্রচন্ড ঘৃণা হলো রুন্টির উপরসারাটা রাত তার অস্থিরতায় কেটেছেসকালের দিকে কয়টা ঘুমের বড়ি খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমাল


দুই-
রুবেলের মা এসে রুবেলকে জাগাল বেলা বারটায়,ছেলের চেহারা দেখে মা অবাক!
:কি হয়েছে-রে তোর?
:কই কিছু না তো
:তা হলে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে রুবেল বলল,“মা ছোট চাচা কি লন্ডন থেকে আর ফোন করেছিল?”
:হ্যাঁ করেছিলগতকাল রাতেও করে ছিলতোকে খুব করে যেতে বলেছেওনার বিরাট ব্যবসা সেখানে,এখন আর একা চালাতে পারছে নাতাই তোকে চাচ্ছে
:ঠিক আছে মাআমি যাবএ দেশে থেকে কিছু হবে নাএদেশের সব মানুষই প্রতারকআজই আমি ঢাকা যাব,সব ঠিকঠাক করতে
:তুই নাস্তা করবি না
:না,মা!একবারে ভাত খেয়ে রওনা হবো
রুবেলের মা চলে গেলরুবেল একটা ব্যাগে সব কাপড়-চোপড় রেডি করলোযতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়,ততো তাড়াতাড়ি সে এদেশ ছাড়বে
তিন-
ঢাকায় এসে চিন্তা করলো,রুন্টির মামা-মামীকে ব্যাপারটা জানানো দরকারশত হলেও ওনারা খুব ভালো মানুষতাছাড়া রুন্টির বাবা-মা থাকে গ্রামে,এখানে মামা-মামীর আশ্রয়ে আছেপ্লেনে উঠার আগে রুন্টিকে একটা চিঠি পোস্ট করে দিল,এয়ার পোর্ট পোস্ট অফিস থেকে
রুন্টি,
তোমার নামটা উচ্চারণ করতে আমার খুব ঘৃণা হচ্ছেতুমি আমার পবিত্র ভালোবাসাকে অপমান করেছোকিন্তু আমি তোমাকে কোন দিনই ক্ষমা করবো নাএমন কি মৃত্যুর পরেও নাতবুও গত রাতের দৃশ্য আমি কাউকে কিছুই বললাম নাতোমার জন্যই এদেশ ছাড়তে বাধ্য হলামভালো থেকো।                                           
                                                             
                                                             ০২.০২.১৯৯৫ইং  
                                                                 ইতি-রুবেল
চার-
দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে রুবেল দেশে ফিরলদেশে ফেরার মোটেও ইচ্ছে ছিল নামায়ের গুরুতর অসুখ,তাই শেষ দেখাটা একটু দেখতে আসাবাসায় এসে দেখে সেই কলংকিত রুন্টি মায়ের পাশে বসেরুবেলকে দেখে হঠাৎ চমকে গেছেরুবেলের মনের মধ্যে আবার সেই তীব্র ঘৃণাটা পুনরায় জেগে উঠলরুবেল কিছু বলার আগেই রুন্টি উঠে চলে গেল
রুবেলের মা কথা বলতে পারছে নাঅবস্থা খুবই খারাপযে কোন মুহুর্তে কিছু হয়ে যেতে পারেরুবেলের মনে,একদিকে রুন্টিকে দেখে ঘৃণা হচ্ছে,অন্য দিকে নিজের মায়ের জন্য কস্টে বুক ফেটে যাচ্ছেসে নিজেকে অনেক কস্টে কন্ট্রোল করলোপরে ডাক্তারের সাথে আলাপ করলো
ডাক্তার বলল,“এখন কিছুই বলা যাবে নাঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি,ঘন্টা খানিক রুগী ঘুমাবেরাতটুকু অপেক্ষা করেন
এই মুহুর্তে মায়ের জন্য খুব ব্যথা অনুভূতি হচ্ছেকিছুই ভালো লাগছে নাছাদের উপর উঠল অনেক দিন পরতার সেই চিলেকোঠার রুমে ঢুকল দীর্ঘ পাঁচ বছর পরেদরজা খুলতেই দেখে নীচে একটা চিঠিসম্ভবত চিঠিটা আজকে-ই লেখাদরজার চৌকাঠ থেকে শুরু করে সমস্ত রুমময় ধুলাবালিতে ঢেকে আছেশুধু মাত্র এই চিঠিটাই ঝকঝকেরুবেল চিঠিটা তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলো
প্রিয় রুবেল,
শুভেচ্ছা নিওভেবে ছিলাম তোমার সাথে কোন দিন দেখা করবো নাতবুও আজ হঠাৎ-ই তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলোতাই এতো কাল যে প্রশ্নটা থেমে ছিল,আজ তার উত্তর দেবোএতে তোমার ভুল ভাঙ্গবে এবং সত্যটাও বের হয়ে আসবে
সে দিন তুমি আমাকে প্রতারক ভেবে দেশ ছাড়লেজানি না তুমি কেন আমাকে প্রতারক বলেছিলেতবে আমার ধারণা তুমি সেদিন আমার বিছানায়,অন্য কিছু দেখনিজানালা দিয়ে তুমি দুটো বিড়ালই দেখে ছিলেকারণ আমি দুদিন পরে বাসায় এসে দেখি বিড়াল আমার বিছানায় প্রসাব-পায়খানা করে পুরো রুমটাই নস্ট করে রেখেছেআমি দেশে(গ্রামের বাড়ি)যাবার সময় তাড়াহুড়োর কারণে জানালাটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলামতখন আমার খুব টেনশন ছিলআমার মায়ের খুব অসুখ ছিল
তোমার সেই চিঠিটা পড়ে মনের মধ্যে খুব বেশী আঘাত পেয়েছিলাম
তাই আমি সেদিন প্রচন্ড অভিমানী হয়ে বিয়ের পিড়িতে পা দিয়েছিকারণ তোমার মতো একজন অবুঝ মনের মানুষের সাথে আর যাই হোক ঘর বাঁধা যায় নাভালোবাসায় বিশ্বাস না থাকলে সে ভালোবাসা কোন দিনই টিকে থাকে নাতাই তোমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করিনিএমন কি আর কোন দিন দেখাও করতে চাইনিপারলে আমাকে ক্ষমা করোআমি সুখেই আছি
                                                            ২২.০২.২০০০ইং
                                                            ইতি -রুন্টি
চিঠিটা পড়ে রুবেলের মনের জ্বালা আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলএ কি হলো!কি ভুল না হয়ে গেলমনটা খুব অস্থির লাগছেশরীরও খুব খারাপ লাগছেএ কি হয়ে গেল রুবেলেরএক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করলোতারপর বিধ্বস্ত মন নিয়ে খোলা ছাদে গেলআজও সেই দিনের মত জ্যোৎস্না ভরা রাতবড় চাঁদ উঠেছেআকাশ ভরা তারাআজও ভরা পূর্ণিমার জোয়ার যেন যৌবনে পা দিয়েছেকিন্তু আজ সেই মন নেই রুবেলেররুন্টির রুমের দিকে তাকাতেই দেখে,আজ সত্যি সত্যি দুটি মানব-মানবী বিছানায় শুয়ে আছেতাদের দেহের এক অংশ স্পস্ট দেখা যাচ্ছেরুন্টির ধবধবে সাদা নগ্ন পা দেখা যাচ্ছেরুবেল নিজেকে এখন খুব জঘন্য মনে করছেখুব নোংরা লাগছে নিজেকেসে নিজেকে নিজেই ঘৃণা করতে লাগলোকি ভাবে এ মুখ রুন্টিকে দেখাবেতাই এ জীবনে বেঁচে থাকার আর অর্থ নাইইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়তেঠিক সেই সময়ই নীচ থেকে কান্নার চিৎকার শোনা যাচ্ছেরুবেলের কস্ট আরও দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হতে লাগলোএখন আর মোটেও বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেইমায়ের সাথে-সাথে রুবেলও চলে যাবে এই পৃথিবী ছেড়ে
কেন না এই দুঃখ,এই কস্ট,এই ঘৃণা,এই লজ্জা নিয়ে বেঁচে থাকা বড় দায়নিজের জীবনের উপর তার প্রচন্ড ঘৃণা আর সহ হচ্ছে নাকে যেন ভিতর থেকে ছিঃ ছিঃ করছেতাই রুবেল শান্তি চায়,চায় নিজের মৃত্যুতাই মৃত্যুর আগে সবার শান্তির জন্য ছোট একটা চিরকুট লেখে গেল
আমার এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়মায়ের সাথে-সাথে আমিও পরপারে চলে গেলামএই অবুঝ মনটাকে তোমরা ক্ষমা কর
                                                   ২২.০২.২০০০ইং
                                                          রুবেল
চিরকুটের শেষ লাইনের অর্থটা শুধু রুন্টি ছাড়া আর কেউ বুঝল না


*      *         *             *                  *               *              *
প্রকাশিতঃসাপ্তাহিক রোববার (2016 )

http://robbar.net/%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D-%E0%A6%AE%E0%A6%A8/    
                
*       *       *        *          *         *        * 



শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

এ্যংলিশ ফুডানি(রম্য ছোট গল্প)



                                                            এ্যংলিশ ফুডানি

                                                                             রচনায়ঃ-রাহান তাপস
ছোট বেলায় বার্ষিক পরীক্ষা শেষ একবার নানা বাড়ি বেড়াতে গেলাম।গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে গ্রাম ঘুরছি।পথে একটা বড়ই গাছ দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।সব পাকা-পাকা বড়ই।খুব লোভ লাগল।কিন্তু এলাকাটা গরিব মানুষদের।গাছটা ও হয় তো কোন দরিদ্র মানুষের।জায়গাটা অশিক্ষিত জেলে পাড়া।তাই ঢিল ছুড়তে ইচ্ছে হল না।কিন্তু সাথের বন্ধুরা বুঝলো আমার খুব বড়ই খেতে ইচ্ছে করছে।তাই এক বন্ধু একটা ঢিল ছুড়লেন।
সাথে-সাথে সশব্দে কতগুলো বড়ই পড়লো।আমরা যেই না কুরাতে যাবো ওমনি ঘর থেকে এক জিন্নছিন্ন  বৃদ্ধ লোক এসে গালা-গালি শুরু করলো।
এক বন্ধু বললো,মেহমান এসেছে চট্টগ্রাম থেকে দুটো বড়ই না হয় পাড়লাম!
বৃদ্ধ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাই চেঁচামেচি শুরু করে দিল।
তখন আমি  ও আমার আঞ্চলিক ভাষায় বললাম,আই চিটাগাং তুন আইচি দা।আই তোয়ারার গরবা।তোয়ারা গরবার লগে এ্যাইল্যা করেননা!(আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি।আমি তোমাদের মেহমান।তোমরা মেহমানের সাথে এমন ব্যাবহার করো!)‍
এমন কথা শুনে বৃদ্ধ তো তেলে-বেগুনে রেগে আগুন।আবার ও বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় বলল,ও মোনু তুমি মোর লগে এ্যংলিশ কও।মুই কি কুছু ব্যুঝি না।মোর চ্যাঁচ্যাঁ চহিদার।চুরি হরবা আবার এ্যংলিশ ফুডানি ও ম্যারবা ।(এই বাচ্চা ছেলে তুমি আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলো।আমি কি কিছু বুঝি না।আমার চাচা ও শিক্ষিত।চুরি করে খাও আরার ইংরেজিও ফুটানি দেখাও)
এই কথা শুনে সব বন্ধুরা একসাথে  হাসিতে ফেটে পড়লো।বৃদ্ধ কিছুই বুঝলো না ঘটনাটা।
আমি চিটাগাংরে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললাম।আর বৃদ্ধ বুঝল আমি ইংরেজিতে কথা বলছি!আসলে যে কখনো এই চিটাগাংরে আঞ্চলিক ভাষা শোনেনি সে কিছুই বুজবে না এ ভাষা।তার মনে হতেই পারে এটা বিদেশি বা ইংরেজি ভাষা!
পরে আমরা দশ টাকা দিলাম সেই বৃদ্ধকে।সে ও খুশি হলো এবং সব কটা বড়ই কুড়িয়ে নিয়ে যেতে বলো।আর বললো ,ঢিল যেন না ছুড়ি।

#       #       #       #          #                 #             #           #
সাহিত্যিক ও সাংবাদিক  রাহান তাপস(Rahan Tapos)
www.facebook.com/Tapos.Rahan
Mobile+8801913935232